বিশেষ প্রতিনিধি সারা দেশে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাজুস কেন্দ্রীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাজুস। সংবাদ সম্মেলেনে সারা দেশে ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠানের সংগঠন বাজুসের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীরসহ কেন্দ্রীয় কিমিটির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।এ সময় গত ৬ সেম্পেটম্বর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাজুস সদস্য ধীমান ধরকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত এবং শোক প্রকাশ করেছে বাজুস।সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যান্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল’ এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন।তিনি বলেন, আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত ২০ জন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের খুন করা হয়েছে। এ সময়ে অনেকে আহত এবং অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, লুট হওয়া ৯৯ শতাংশ মালামাল এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। এক শতাংশ উদ্ধার হলেও লুটের ঘটনায় তদন্ত বা বিচারে সুফল পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ মামলা এখনো তদন্তাধীন। আমারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এসব মামলার দ্রুত তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে সারা দেশে স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং জুয়ালারি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি।এক প্রশ্নের জবাবে এনামুল হক খান দোলন বলেন, সারা দেশে এখন ৪০ হাজার সদস্য আছে বাজুসের। তবে সীমিত সক্ষমতার আওতায় তাদের বীমার আওতায় আনা হবে।সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বাজুসের সাবেক সভাপতি ও বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন মনিটরিং ডিস্ট্রিক্ট অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায়, বাজুসের সহসভাপতি ও বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান গুলজার আহমেদ, বাজুসের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. রিপনুল হাসান, জয়দেব সাহা, ইকবাল উদ্দিন, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যান্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্ট কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ শংকর, স্বপন চন্দ্র কর্মকার, বিকাশ ঘোষ ও বাবুল রহমান।সংবাদ সম্মেলনে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, জুয়েলারি শিল্পের চলমান সংকট ও সমস্যা, দেশি-বিদেশি চোরাকারবারির সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, অর্থপাচার ও চোরাচালান বন্ধে কাস্টমসসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জোরালো অভিযানের দাবি জানিয়ে গত ১৩ আগস্ট বাজুস সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সংবাদ সম্মেলনের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপরতা শুরু করে। বাজুসের আহ্বানে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআরের কাস্টমস বিভাগ ও অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ব্যাপক সাড়া দেয়। এই উদ্যোগের জন্য প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাজুস।
সম্প্রতি জুয়েলারিতে চুরির ঘটনা উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জুয়েলারি দোকানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। গত ১ আগস্ট রাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া বাজারের মন্দির মার্কেটের কাঁকন জুয়েলার্সে চুরির ঘটনা ঘটে। চোর প্রায় ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং দুই কেজি রুপার গয়না চুরি করে নিয়ে যায়। এর আগে গত ২৯ জুলাই মিরপুরের রূপনগরের রজনীগন্ধা মার্কেটে দিনের বেলায়ই নিউ বিসমিল্লাহ জুয়েলার্সে চুরির ঘটনা ঘটে। চোর ওই দোকান থেকে প্রায় ৪০ ভরি স্বর্ণ এবং ৫০ ভরি রুপা চুরি করে। এরও আগে ২০ জুলাই ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রদীপ জুয়েলার্সে ককটেল ফাটিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতরা প্রায় ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতের গুলিতে অধীর কর্মকার গুরুতর আহত হন। এ ব্যাপারে ২১ জুলাই ভালুকা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।এর আগে গত ৬ জুন ময়মনসিংহের ট্রাংক পট্টিতে বর্ষা জুয়েলার্সে চুরি হয়। এ ঘটনায়ও কোতোয়ালি থানায় ৮ জুন একটি মামলা করা হয়। ২৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টা থেকে ২৫ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় রাজধানীর রাজারবাগ কালীমন্দির মার্কেটে ‘মা গোল্ড হাউজে’ ভয়াবহ চুরির ঘটনা ঘটে। ২৫ এপ্রিল এ ঘটনায় সবুজবাগ থানায় মামলা হয়। তার আগে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের মধ্য যেকোনো সময় রাজধানীর কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা টাওয়ারের রাঙ্গাপরীতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ চুরির ঘটনায় ৫ ফেব্রুয়ারি ভাসানটেক থানায় মামলা হয়েছে।এ ছাড়া গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের কালীবাজারের কার্তিক জুয়েলার্সে চুরির ঘটনায় ওই দিনই নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় মামলা হয়। ১৭ ডিসেম্বর রাত ৯টা থেকে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টার মধ্যে রাজধানীর রমনা মডেল থানাধীন কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি শপিং কমপ্লেক্সের মোহনা জুয়েলার্স ও বেস্ট অ্যান্ড বেস্ট গোল্ড ক্রিয়েশন জুয়েল এভিনিউ প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনায় ১৮ ডিসেম্বর রমনা থানায় একটি মামলা হয়।